কলেজ শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের মৃত্যু নিয়ে নতুন রহস্য!

নাটোরে শিক্ষার্থীকে বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া খুবজিপুর এম হক ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার সকালে নাটোর শহরের বলারীপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের স্বামী মামুন হোসেন ও বাসার কেয়ারটেকার কথায় গড়মিল পাওয়া গেছে। তাই এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নিহতের স্বামী নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন হোসেন বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য তিনি তার স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে বাড়ীর বাহিরে যান। পথে জরুরী কথা বলার জন্য স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দেন।

কিন্তু স্ত্রী খায়রুন নাহারকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও সে ফোন রিসিভ করেনি। ফোন রিসিভ না হলে তিনি বাড়ীতে ফিরে আসেন। এরপর দরজা খুলে ঘরে গিয়ে ঘরে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না প্যাচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে। পরে গ্যাস লাইট দিয়ে ওড়না পুড়িয়ে তার স্ত্রীকে নিচে নামিয়ে বাড়ীর কেয়ারটেকারকে ডাক দেন। এরপর পুলিশকে জানানো হয়।

মামুন আরও বলেন, বিয়ের আগে ব্যাংক, এনজিওতে খায়রুনের ১৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ ছিল। সম্প্রতি তার বড় ছেলে খায়রুন নাহারের কাছে ছয় লাখ টাকার বেশি দামি মোটরসাইকেল দাবি করে। কিনে না দিলে ছেলে আত্মহত্যা করবে বলে ভয় দেখায়। সেই সাথে নানা বাজে কথা বলে। একারণে খাইরুন নাহারের অভিমান হতে পারে।

ভাড়া বাসার কেয়ার টেকার নিজাম উদ্দিন জানান, রাত দুইটার দিকে মামুন হোসেন বাসার বাহিরে যান। তাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, হাসপাতালে যাচ্ছেন। পরে সকালে মামুন হোসেন বাসায় ফেরেন। কিছুক্ষণ পরে তাকে ওপরে ডাকেন। তিনি গিয়ে এঘটনা দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। নাফিউল, শাহিন, জাফরসহ প্রতিবেশীরা জানান, তাদের ভালবাসা করে বিয়ে হয়। তাদের সুখের সংসার বলে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। কিন্তু কেন সে আত্মহত্যা করল তা তারা বুঝতে পারছেন না। শহরের ভাড়া বাসায় তেমন কেউ কারো খোঁজ রাখেনা।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক খায়রুন নাহারের আগের স্বামীর বোন মাহফুজা বেগম জানান, তিনি খবর পেয়ে এসেছেন, তাদের সঙ্গে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

খায়রুন নাহারের চাচাতো ভাই নাঈম হাসান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত মামুন খাইরুন নাহারকে টাকা-পয়সার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। বিভিন্ন সময় তাকে মারধর করতো। এছাড়াও তার বাড়ির দলিলও সে জোর করে নিয়েছে। ঘটনা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী খতিয়ে দেখছে। খাইরুন নাহারের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে তারাই জানাতে পারবে। সকালে মৃত্যুর খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। এ ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত চাই আমরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামুনের এক বন্ধু জানায়, মামুন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের নেশার সাথে জড়িত থাকে এবং সে নিয়মিত ইয়াবা টেবলেট সেবন করে।

খাইরুন নাহারের কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ জানান, খাইরুন নাহারের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কলেজে কোনও প্রশ্ন তোলা হয়নি। তিনি নিয়মিত কলেজে আসতেন। তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করিনি। মামুনের পরিবারের কারো সাতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ছেলে আটক হলেও পরিবারের কেউ তার খবরাখবর নিতে আসেনি।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত হলে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা কি। এছাড়া তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী মামুন হেসেনকে আটক করা হয়েছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, ‘শিক্ষক ও ছাত্রের প্রেমের কাহিনি ছড়িয়ে পড়লে দুজনই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন। কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। এচাড়া মামুনের সাথে দাম্পত্য কলহ হয়েছিল কিনা এসব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত কাজ করছি।

উল্লেখ্য প্রায় ৬ মাস আগে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী মামুন ও গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর এম হক ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে ভালবাসা করে বিয়ে করে। তারা নাটোর শহরের বলারিপাড়া মহল্লায় একটি ভাড়া বাসায় বেশ সুখের সংসার পাতে। এ সংবাদটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

Share this post

PinIt
scroll to top