দাজ্জাল কি কবরেও মানুষকে ফেতনায় ফেলবে?

দুনিয়াতে মুসলমানের জন্য বড় বড় যত ফেতনার আবির্ভাব হয়েছে এবং হবে এর মধ্যে দাজ্জালের ফেতনা সবচেয়ে বড়। সব নবী-রাসুলই তাদের উম্মতকে দাজ্জালের ফেতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু কবরের মানুষও কি দাজ্জালের ফেতনায় পড়বে?

হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। এরপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন-
إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ، وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ، لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ، وَلَكِنِّي أَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ: تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ، وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
‘আমি তোমাদেরকে তার ফেতনা থেকে সাবধান করছি। সব নবীই তাদের উম্মতকে দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মতকে বলেন নাই। তাহলো- দাজ্জালের এক চোখ অন্ধ হবে কিন্তু আল্লাহ অন্ধ নন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দাজ্জাল কি কবরের মানুষকেও ফেতনায় ফেলবে?
দাজ্জাল কি শুধু জীবিত মানুষকেই ফেতনায় ফেলবে নাকি যারা আগে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরকেও ফেতনায় ফেলবে? এ সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা কী?
না, যে বা যারা মৃত্যুবরণ করলো; সে দুনিয়ার সব ধরণের ফেতনা থেকে বেঁচে গেলো। সুতরাং যারা দাজ্জালের আগমনের আগে মারা যাবে; সেসব কবরের লোকজনকে দাজ্জালের ফেতনা স্পর্শ করতে পারবে না।

শুধু তা-ই নয়
হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী যারা দাজ্জালের খবর শুনে তার কাছে ন যায় তাহলে সেও দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। আর যারাই তার কাছে যাবে তারাই তার ফেতনায় পতিত হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবুদ দাহমাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি হজরত ইমরান ইবনুল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ، أَوْ لِمَا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ
‘কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহর কসম! যে কোনো ব্যক্তি তার কাছে এলো তাকে ঈমানদার মনে করে তার অনুসরণ করতে শুরু করবে; তার মধ্যে যেসব সংশয় সৃষ্টি হয়েছে সে কারণে।’ (আবু দাউদ)
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, যারা দাজ্জাল থেকে দূরে অবস্থান করবে, তারা দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।

সুতরাং মৃতব্যক্তি দাজ্জালের ফেতনায় আক্রান্ত হবে এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তবে মানুষ যদি ঈমানহারা হয়ে মৃত্যু বরণ করে তবে কবরে সে দাজ্জালের ভয়াবহতার চেয়েও বড় ভয়াবহতায় পতিত হবে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত বেশি বেশি এ দোয়া পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের আজাব ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচতে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন-
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল্ মামাতি, ওয়া মিং সাররি ফিতনাতিল্ মাসিহিদ্-দাজ্জাল।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আজাব থেকে রক্ষা করো, আমাকে জাহান্নামের আজাব এবং দুনিয়ার ফেতনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করো।’ (বুখারি, মুসলিম)

উল্লেখ্য, দাজ্জাল শব্দের অর্থ হলো মিথ্যুক, প্রতারক, ভণ্ড, পথভ্রষ্ট কারী মিথ্যা দাবীদার, ছদ্মবেশী। হাদিসে যাকে বলা হয়েছে, المسيح الدجّال ‘আল মাসিহুদ্দাজ্জাল’ আর বাইবেলে বলা হয়েছে, AntiChrist বা খ্রিস্ট বিরোধী।

এই দাজ্জাল এমন অলৌকিক ও বিস্ময়কর বিষয়াদি প্রদর্শন করবে যেগুলো দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবি করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই সতর্ক করেছেন।

মুমিন বান্দারা এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ইমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।

এ কারণেই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে সতর্ক ও সচেতন করার উদ্দেশ্যে তার শারীরিক গঠন বর্ণনা পূর্বক তার নানা প্রতারণা, ভণ্ডামি ও গোমরাহি মূলক কার্যক্রম তুলে ধরেছেন এবং দাজ্জলের ফেতনা থেকে আত্মরক্ষার বিভিন্ন উপায়-উপকরণ বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। কবরের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। কারণ দাজ্জালের ফেতনার চেয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির জন্য কবরের ফেতনা আরও বেশি ভয়ংকর। আল্লাহ তাআলা ফেতনা থেকে হেফজত করুন। আমিন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top