ইসলামী দলগুলোর ভাস্কর্য নিয়ে মাতামাতি এবং অনগ্রসরতার একটি উদাহরণ

বাংলাদেশের রাজপথ হঠাৎ গরম। অভিজ্ঞতা বলে যে শীতকাল এলেই রাজনৈতিক কর্মীদের চাংগা রাখতে দলগুলো বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠে তাদের সরব উপস্থিতির জন্য মাঠ গরম রাখেন। এই অভ্যাসে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম আমরা। মাঝখানে কিছুটা ছেদ পড়াতে আজ হুজুরদের এই সরব উপস্থিতি আমাদের স্মরণশক্তিকে চাংগা করলো। ধন্যবাদ তাদের। 

মাঠ গরম করেন, তাতে আমাদের সাধারণ জনগণের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটা যদি জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে, তবে তা কল্যাণকর নহে। ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং ৯০% মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে আফগানিস্তান ও তালেবানীয় স্টাইলের নমুনা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রীতির গর্বিত ঐতিহ্যে কালিমা লেপন নয় কি?

আপনারা যতটুকু বাংলাদেশ ও ইসলাম ধর্মকে অন্তরে ধারণ করে ভালোবাসেন, আমরা সাধারণ জনগন কি আমাদের সোনার বাংলাদেশকে তার চেয়ে কম ভালোবাসি? আপনারা যেমন এদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভীতের উপর রেখে যেতে চান পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, আমরাও তদ্রূপ চাই। মোদ্দা কথা আমাদের আর আপনাদের চাওয়ার মাঝে মৌলিক ফারাক যদি অবর্তমান, তবে কেন এই কালো মেঘের ঘনঘটা?

উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে মুসলমান কর্তৃক ইংরেজি শেখায় অনাগ্রহতা আমাদের কতোটা পিছিয়ে দিয়েছে? 

পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম আয়াতে ইকরা অর্থাৎ পড়ো বা জ্ঞ্যান-অর্জনের জন্য সুদূর চীনদেশে যাবার কথা কি তবে ভূল?

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এক যুবক কর্তৃক মুসল্লিরত মুসলমানদের হত্যা হলো। অথচ কোন মুসলিম যুবক যখন অন্যত্র একাজ করলে পশ্চিমা বিশ্ব জংগী বাদ তকমা দিয়ে সে দেশকে পারলে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। একই প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা আমি ঘৃনাহ করি। আমাদের কাঠ মোল্লাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও অশিক্ষিত জনবলকে ধর্মের নামে গোঁড়ামি ইনজেকশন ও ক্যাপসুল খাওয়ানোর মাশুল দিতে হয় সহনশীল মুসলিমদের। হায়, যদি আমরা একটু হতাম হেদায়েতপ্রাপ্ত!

ক্ষমা করবেন ধর্ম নিয়ে লেখার আমার যোগ্যতা নেই। আমি সরল সিদা একজন আল্লাহ ভক্ত বাংলাদেশী গর্বিত মুসলমান যে গর্বিত তার দেশে সকল ধর্মের সহনশীল সহবাসের কালচারে। আমরা কোনমতেই সে ঐতিহ্য ও গর্বকে বিনষ্ট হতে দিতে চাই না।

যারা পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা ছড়ানোর পাঁয়তারা করছেন, তারা সকলেই চিহ্নিত। সাবধান। 

অনগ্রসরতার বাস্তব উদাহরণ দিয়েই সমাপ্তি টানছি আজ। ২০১০ সন হতে রংপুরস্থ  শ্যামপুর চিনিকল সংলগ্ন কাঁটা বাড়ি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সাথে জড়িত। ১৪১টি এতিম বাচ্চার মাঝে ৪০% আবাসিক এতিম নিয়ে আমাদের শুন্য হতে পথচলা। মাসে ৯০,০০০/ খরচ হয়। বাতসরিক রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়ি ভাংগা আম বিক্রয় বাবদ লভ্যাংশ হতে মাসিক ১০,০০০/ আয় হয়। আমরা চেষ্টারত এতিমখানাটিতে Income Generating Source এ রুপান্তর করতে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ দ্বারা খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগুচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে এই স্বনির্ভরতা কারো কারো কাছে অপছন্দের বিষয়। প্রাথমিকভাবে মনে কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে এর কারণ বিশ্লেষণ করার পর উতসাহী হয়ে পড়লাম। উল্লেখ্য যে ৪/৫ বছর পূর্বে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বন্ধুর সহায়তায় একটি কম্পিউটার ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার পরও এটি ব্যাবহারে এতিমখানা কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহী আচরণ এর কারণ অনুসন্ধানে উৎসুক করে তুললো। 

কারিগরী শিক্ষায় দিক্ষিত করনের উদ্দেশ্যে উদ্যোগ নিয়ে এতিমখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় আবারো হতাশায় ডুবলাম। একজন রাজমিস্ত্রী, স্যানিটারী মিস্ত্রী বা ইলেকট্রিসিয়ানের অভাব আমরা শহুরে মানুষজন প্রায়শই অনুভব করি। এদের একবার ডাকলে নূন্যতম ৫০০- ৮০০/ দিতে হয়। সেই কথা চিন্তা করেই আগ্রহী হলাম এতিমখানার বাচ্চাদের ভবিষ্যতের সাবলম্বী হবার অভিপ্রায়ে তাদের কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাবস্হাকরনে। 

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হুজুরের খেদমতকারী কোমলমতি শিশুগণের চোখকান খুলে গেলে হুজুরদের খেদমতে নিরবচ্ছিন্ন সেবাগ্রহণ হতে বঞ্চিত হবার ভয়ে এতিমগনকে অন্যের দয়াদাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করে চলাকেই শ্রেয় বিবেচনা করেন তারা। এরা কারা? এদের চরিত্রসমূহ নিজ বিবেক দিয়ে বিচার করুন। উত্তর নিজের চোখের সামনেই প্রস্ফুটিত হবে। ছোটছোট শিশুদের মনে এরা যে ধর্মীয় অন্ধত্ব অনুপ্রবেশ করান কচি বয়সে, তা থেকে এদের বের করে আনা সত্যি দূরহ একটি কাজ – রীতিমতো দুঃসাধ্য।

আজকের লেখার মূল প্রতিপাদ্য – বাংলাদেশ একটি সহনশীল অসাম্প্রদায়িক দেশ যা নিয়ে আমরা গর্ব করি। আমরা নিশ্চয়ই ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে সেই ঐতিহ্য হতে কক্ষচুত হবো না। বিজয়ের মাসে আমরা চাই একটি সুরে গান গাইতে – 

"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।"

শুভরাত্রি বাংলাদেশ। 

লেখকঃ- মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অবঃ ) 

আহবায়ক – দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক

ahmedferdous987@gmail.com

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top