শিকলে বাঁধা মান্নানের দিনরাত্রি

আতা গাছ ও পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই তার নিত্যসঙ্গী। রোদ বৃষ্টি ঝড় যা-ই হোক, তাকে সেখানেই দিনরাত থাকতে হয়। তার চোখে মুখে এখন শৈশবের অপূর্ণ সাধ-স্বপ্নগুলোর মিইয়ে যাওয়া ছাপ। সেখানে স্থান করে নিয়েছে দুর্বিষহ জীবনের না বলা বেদনার ছাপ। সেসব দুঃখ-বেদনা প্রকাশের শক্তি হারিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার কাশিয়াহাটা গ্রামের এক অসচ্ছল পরিবারের সদস্য আব্দুল মান্নান (৩২)।

সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের-চালা একটি ঘরে তার সংসার। ঘরের ভেতর থাকেন মান্নানের স্ত্রী ও দুই সন্তান। আতা গাছটি ঘরের পেছনে। সেই গাছে বাঁধা শিকল পায়ে মাটিতে শুয়ে আছেন মান্নান। তার শরীরে নোংরা কাপড়-চোপড়। ছোট্ট বারান্দায় তাকে থাকতে হয়। সেখানেই তার নাওয়া খাওয়া। প্রস্রাব-পায়খানার জন্য পাশেই গর্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেটেছে তার জীবনের প্রায় ১২টি বছর। অথচ এক সময় প্রাণোচ্ছল শৌখিন যুবক মান্নান এলাকার সবার প্রায় সবার প্রিয় মানুষ ছিলেন।

জানা গেছে, ১৫ বছর বয়সে মান্নানের চলাফেরায় পরিবর্তন লক্ষ্য করেন স্বজনরা। বিভিন্ন কবিরাজের কাছে নিলে তারা ঝাড় ফুঁ করতে থাকেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। একপর্যায়ে মান্নান মানুষকে মারধর করা শুরু করেন। সব সময় গালিগালাজ করেন। শিশুরা তাকে দেখলে ভয় পায়। তখন তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে একটু সুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এর কিছুদিন পর সব এলোমেলো হয়ে যায় মান্নানের জীবনে। ধীরে ধীরে পাগলামি বাড়তে থাকে। স্বজনরা তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন। এরপর থেকে শুরু মান্নানের শিকলবন্দি জীবন।

মান্নানের স্ত্রী রনজনা খতুন জানান, স্ত্রী হয়ে আর স্বামীর কষ্ট সইতে পারছি না। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্বামীর চিকিৎসার আশা করেন তার অসহায় স্ত্রী। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু টাকা খরচ করার সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানসহ সরকারি সহায়তা চান তিনি।

ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ জেমস মল্লিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ অবস্থায় আছেন। কেউ দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা করালে হয়তো ভালো হয়ে উঠতেন মান্নান।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top