রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তার বৃষ্টি (ছদ্মনাম)। কলাবাগানের বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে সেন্ট্রাল রোডের ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের সামনের রাস্তায় পৌঁছালে দিনদুপুরে এক অটোরিকশাচালক তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এ সময় বৃষ্টির চিৎকারে আশপাশের কয়েকজন এগিয়ে এলে দ্রুত সটকে পড়েন অটোচালক।
ঘটনাটি ঘটে গত ১০ মার্চ। ঘটনার পরপরই বৃষ্টি ছুটে যান ধানমন্ডি থানায়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় কলাবাগান থানায়। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন বৃষ্টি। পরে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৩ মার্চ লিখিত অভিযোগটিকেই মামলায় রূপান্তরিত করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমানকে।
অভিযুক্ত চালক ও অটোরিকশাটিকে শনাক্ত করতে মাঠে নামেন এসআই সাইদুর রহমান। ২২ দিনের চেষ্টায় সফল হন তিনি।
এসআই সাইদুর রহমান বলেন, বৃষ্টির (ছদ্মনাম) অভিযোগ পাওয়ার পরে প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করি। তখন ঘটনার সত্যতা পাই। সেইসঙ্গে অটোরিকশাটির নম্বর পাই। কিন্তু অটোরিকশাটি শনাক্ত করতে পারছিলাম না। এরপর নিজেই অটোরিকশাচালক সেজে মিরপুর, খিলগাঁও, উত্তরা, ধানমন্ডি, হাজারিবাগ এলাকায় ঘুরতে থাকি। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে যে গ্যারেজে সন্দেহ হতো সেখানে যেতাম।
তিনি বলেন, এভাবে খিলগাঁও এলাকার একটি গ্যারেজে গিয়ে বলি, ওস্তাদ আমার এ গাড়িটা (সিএনজি) আপনার গ্যারেজে রাখতে চাই। এরপর অন্য একটি অজুহাতে পুরো গ্যারেজের গাড়ির নম্বর পরীক্ষা করি। একজনকে সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তথ্যে মিল পাওয়া গেল না। পরে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাতে যাত্রাবাড়ী থানার ধোলাইপাড় এলাকার একটি গ্যারেজে গিয়ে অটোরিকশাটি শনাক্ত করি। এরপর কৌশলে চালককে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়। চালকের নাম মো. সুজন তালুকদার (২৯)। বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। সে গত এক বছর ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছে।
সাইদুর রহমান আরও বলেন, গ্রেফতারের পর চালক সুজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র পাল বলেন, আমাদের পুরো কার্যক্রমটিই পুলিশিংয়ের অংশ। ঘটনার পরপরই আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অটোরিকশাচালকের ছদ্মবেশে অভিনব উপায়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত চালককে গ্রেফতার খুশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বৃষ্টির মা।
তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই বিষয়টির কোনো সমাধান হচ্ছিল না। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছি। আমরা লেগে ছিলাম। আমার মেয়ে ঘটনার পরে একাই থানায় গিয়েছে। পরে আমি মেয়েকে নিয়ে গিয়ে কলাবাগান থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি আমার মেয়েকে ভেঙে পড়তে দিইনি। চালককে গ্রেফতারের জন্য যা যা করার আমরা তাই করেছি।