মামুনুল হক এর ফোনালাপ ফাঁস ! বেরিয়ে এলো আসল রহস্য !

হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক আজ শনিবার (৩ মার্চ) এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা রিসোর্টে ঢুকে ওই নারী সঙ্গীসহ তাকে অবরুদ্ধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে মামুনুল হককে উদ্ধার করে।

মামুনুল হকের দাবি মতে, সঙ্গে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার নাম আমেনা তৈয়াবা। ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক ওই নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন। তবে ওই নারী নিজেকে জান্নাত আরা জান্নাত বলে পরিচয় দেন।

এদিকে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তার এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর অডিওটি সংগ্রহ করেছে প্রথম খবর।

ফোনালাপে রিসোর্টের ওই নারীকে জনৈক শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের স্ত্রী সম্বোধন করেন মামুনুল।

মামুনুল হক ফোনালাপে তার স্ত্রীকে ওই নারীর পরিচয় হিসেবে শহীদুল ইসলাম নামে কোনও এক ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানান। বাসায় গিয়ে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য স্ত্রীকে আগে থেকেই ‘সব জানি বলে’ মিথ্যা কথা বলার পরামর্শ দেন।

মামুনুলের ফোনালাপ:

মামুনুল হকের স্ত্রী: আসসালামু আলাইকুম

মামুনুল হক: ওলাইকুম সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। পুরা বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে আইসা বলবো। ওই মহিলা যে ছিল সাথে সে হইলো আমগো শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। বুঝছো? ওইটা নিয়া এমন একটা মানে অবস্থা এরকম তৈরি হইয়া গেছে যে এই কথা বললে তারা ওখানে মানে ই কইরা ফেলছিল আমাকে।

মামুনুল হকের স্ত্রী: আচ্ছা, বাসায় আসেন, তারপর যা বলার তারপর বইলেন।

মামুনুল হক: বলুম তো। তুমি বিষয়টা মানে অন্যান্য কথা বলতে হইবো, পরিস্থিতিটা এমন হইয়া গেছে। এখন এই জন্য তুমি আবার মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইরো না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে তুমি বইলো হ্যাঁ আমি সব জানি। এইরকম কিছু একটা বইলো।

মামুনুল হকের স্ত্রী: ঠিক আছে।

মামুনুল হক: আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।

প্রসঙ্গত, রিসোর্টে অবরুদ্ধ হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে হেফাজতের নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্টে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। পরে হেফাজতের নেতাকর্মীরা তাকে ওই রিসোর্ট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

মামুনুল হকের দাবি মতে, সঙ্গে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার নাম আমেনা তৈয়াবা। ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক ওই নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন। তবে ওই নারী নিজেকে জান্নাত আরা জান্নাত বলে পরিচয় দেন।

এ খবর ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচারের পর জান্নাত আরা ঝরনার গ্রামের বাড়ি আলফাডাঙ্গায় ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সংবাদ পেয়ে শনিবার রাতে ঝরনার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার বাবা-মায়ের মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। রাত সোয়া ১২টার দিকে বাড়িতে গিয়েও যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।

কামারগ্রামের বাসিন্দা ও আলফাডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আমাদের আলফাডাঙ্গা’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সেকেন্দার আলম জানান, এ ঘটনা প্রচারের পর অনেকেই জানার জন্য মোবাইলে ফোন করেন। জান্নাত আরা নাম হলেও আমাদের এলাকায় তিনি ঝরনা নামে পরিচিত। বিয়ে হয়েছে খুলনায়। দুটি ছেলেও আছে। তবে পরের বিয়ের খবর জানা নেই। আজ শুনলাম ও খবরে দেখলাম।

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ইকু জানান, ঝরনার বাবা ওয়ালিয়ার রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমার সময়ের কমিটির কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। পরে তাকে সভাপতি করা হয়। বর্তমান কমিটিতে উনি সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

তবে তিনিও বিয়ের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে বলেন, ‘আবার বিয়ে হইছে তাতো শুনিনি। গ্রামবাসী কেন পরিবার জানে কিনা সন্দেহ।’

ওয়ালিয়ার রহমানের (ঝরনার বাবা) বাড়ির পাশের বাসিন্দা কামারগ্রাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান সাইক্লোন বলেন, ঝরনার বাবা ওয়ালিয়ার ভাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সহজ সরল মানুষ। তার মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছে। তার দুই ছেলেও আছে। পরে বিয়ে হয়েছে কি-না জানি না। তবে তার পরিবারও সম্ভবত জানে না। জানলে গ্রামবাসী অন্তত জানতো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে, মাওলানা মামুনুল হক বলছেন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়েই তিনি সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে যান। তবে তার দল খেলাফতে মজলিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দ্বিতীয় বিবাহের কথা দলীয়ভাবে অজানা ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে মামুনুল হক আগে কোনও তথ্য প্রকাশ করেননি।

তবে বিয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তার দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন শনিবার পৌনে সাতটার সময় প্রথম খবরকে বলেন এই ঘটনাটিও ষড়যন্ত্র কিনা, আমরা দলীয়ভাবে তা খতিয়ে দেখবো। ঘটনাটি আমরা মাত্র কয়েক মিনিট আগে শুনেছি, আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার দায়িত্বশীলরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম খবরকে জানায়, মাওলানা মামুনুল হক আজ সকালেই মোহাম্মদপুর থেকে কেরানীগঞ্জে তার মাদ্রাসার উদ্দেশে যান। আজ তার সঙ্গে ড্রাইভার ও সহকারী কেউই ছিলেন না। এরপর দলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি বলে সূত্রটির দাবি।

ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে, মাওলানা মামুনুল হক বলছেন, দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়েই তিনি সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে যান। তবে সূত্রটি তার দ্বিতীয় বিবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। মজলিসের দায়িত্বশীল এই সূত্রটি জানায়, দ্বিতীয় বিবাহের কথা দলীয়ভাবে আগে অজানা ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে মামুনুল হক কোনও তথ্য প্রকাশ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মামুনুল হকের বড় ভাই মাওলানা মাহফুজুল হককে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top