অনিয়ম বন্ধে নতুন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাক-প্রাথমিকে মোট ৩২ হাজার ৫৭৭ জন নিয়োগ দেয়া হবে। এর বিপরীতে প্রায় ১৩ লাখের বেশি আবেদন পড়েছে। বিশাল এ সংখ্যাক প্রার্থীর পরীক্ষা নিতে হিমশিম খেতে হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতকে (ডিপিই)।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নিয়োগে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো গেলেও কেন্দ্রভিত্তিক অনিয়ম বন্ধ করা যায়নি। ওই সময় পাচঁটি জেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়া, প্রশ্ন সমাধানে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকানোর ঘটনা ঘটে।

আসন্ন পরীক্ষায় এসব অনিয়ম বন্ধে পরীক্ষকদের ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ডিপিই। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষকদের নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে লটারি করে পরীক্ষক কোন কেন্দ্রে ডিউটি করবেন তা নির্ধারণ হবে এবং পরীক্ষা শুরুর এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে তাকে জানানো হবে।

এতে পরীক্ষা হলের মধ্যে পছন্দের পরীক্ষার্থীকে বাড়তি সুবিধা দেয়া বা আগের থেকে কেন্দ্র চুক্তি নেয়ার সুযোগ থাকবে না।

জানা গেছে, রোববার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফরের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। যেখানে পরীক্ষকদের ডিউটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে বুয়েটের প্রতিনিধি জানান, এখন থেকে দুই বা তিনদিন আগে শিক্ষক কোথায় ডিউটি করবেন তা জানানো হবে না। তবে তিনি পরীক্ষার ডিউটিতে থাকবেন সেটা জানবেন কিন্তু কোন কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন তা জানবেন না। সেটি জানবেন পরীক্ষার শুরুর এক ঘণ্টা আগে। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের চাপ এবং কেন্দ্রভিত্তিক চুক্তি করে নকল করার সুযোগ আর থাকবে না। এছাড়া কেউ যাতে কেন্দ্রে কোনো ধরনের ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষার দিন পরীক্ষকরা জেলার নিদিষ্ট একটি জায়গায় অব্স্থান করবেন। এক ঘণ্টা আগে লটারির মাধ্যমে তার কেন্দ্র জানিয়ে দেয়ার পর তিনি সেখানে যাবেন। জেলা শিক্ষা অফিস ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি করা হবে।

এর আগে জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে একদিন আগেই পরীক্ষককে তার কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হতো। এতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক চাপ আসতো তার ওপর। কেন্দ্রভিত্তিক চুক্তি হতো পরীক্ষার্থীদের নকল বা হলে উত্তর বলে দেয়ার জন্য।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম  বলেন, এবার সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আরও স্বচ্ছতা আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পরীক্ষককে নজরদারির মধ্যে রাখা এবং তাদের ডিউটি লটারির মাধ্যমে ঠিক করা। কারণ সর্বশেষ ২০১৮ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ যেসব অনিয়ম হয়েছে তার বেশিরভাগ হয়েছে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে।

তিনি আরও বলেন, সে জন্য দুইদিন আগে নয় এবার পরীক্ষকের কেন্দ্র এক ঘণ্টা আগে জানানো হবে। সেজন্য বুয়েট ও ডিপিই টেকনিক্যাল কমিটি এ সংক্রান্ত কাজ প্রায় শেষ করেছে।

ডিপিই কর্মকর্তারা জানান, গত পরীক্ষায় আট সেট প্রশ্ন করা হয়েছিল। এবার প্রশ্নের সেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কত সেট হবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া আগে পরীক্ষায় যেসব জেলায় প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষার হলে ঝামেলা হয়েছে সেসব জেলাগুলো থাকবে অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণে। পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাক-প্রাথমিকে ২৫ হাজার ৬৩০ জন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে রাজস্ব খাতে ৬ হাজার ৯৪৭ জন অর্থাৎ মোট ৩২ হাজার ৫৭৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। এ নিয়োগের পরীক্ষার জন্য তিন পার্বত্য জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) ছাড়া বাকি সব জেলা থেকে প্রায় ১৩ লাখ আবেদন পড়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুয়েট। পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, চাকরিপ্রার্থী ও পরিদর্শককের সিট বণ্টন, খাতা মূল্যায়ণসহ সব কিছুই বুয়েট করে। আর প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষা উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব বুয়েটকে দেয়ার পর শিক্ষক নিয়োগে তেমন কোনো বির্তক নেই। বুয়েটের তত্ত্বাবধানে হওয়া প্রায় সবকটি নিয়োগ প্রায় স্বচ্ছভাবে হয়েছে।

ডিপিই কর্মকর্তারা আরও জানান, এক সময় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষার হলে উত্তর লিখে দেয়া থেকে চাকরি নিশ্চিত করার কন্ট্রাক্ট নিতো দালাল চক্র। বুয়েটকে দায়িত্ব দেয়ার পর সে ঘটনা আর ঘটছে না।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top