সাত জন শিক্ষকের মধ্যে বিদ্যালয়ে প্রতিদিন আসেন মাত্র ১ জন শিক্ষক। যিনি উপস্থিত থাকেন তার নাম জাকারিয়া। প্রধান শিক্ষকসহ বাকি ৬ জন শিক্ষক সপ্তাহে দুয়েকবার এসে শিক্ষক হাজিরা খাতায় নাম লেখে চলে যায়। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় পিয়ন দিয়ে।
আরো পড়ুনঃ প্রাথমিক শিক্ষক বদলি, নতুন করে যা জানা গেল
চিত্রটি বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউপির ২নং ওয়ার্ডের পোলাউ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, বিষয়টি এই বিদ্যালয়ের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
বুধবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে বিদ্যালয়েটিতে দেখা যায়, মোট ৪টি ক্লাস চলমান রয়েছে। তার মধ্যে একটি ক্লাসে পাঠদান করছে জাকারিয়া নামের সহকারী শিক্ষক এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠদান করছে হাতারাম ত্রিপুরা নামের একজন পিয়ন। বাকি দুই ক্লাসে শিক্ষক শুন্য অবস্থায় শিক্ষার্থীরা হৈহুল্লোড় করছে।
আরো পড়ুনঃ ৩০০ কোটি টাকা পাবে ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিক্ষক জাকারিয়া বলেন, আজকে অন্যান্য শিক্ষকরা ছুটিতে আছে। একটা বিদ্যালয়ে ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন কীভাবে একসঙ্গে ছুটিতে থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী শিক্ষক জাকারিয়া কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
অনুপস্থিত থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারা হলেন- প্রধান শিক্ষক স্বপন চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক মো. ফরিদ, এমরানুল হক, কেএম জসিমুল আলম মানিক, কামনা ত্রিপুরা এবং তহুরা খাতুন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই ইউনিয়নের অন্য বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক বলেন, দূর-দুরান্ত থেকে এ বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসার জন্য অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা আগ্রহ প্রকাশ করে শুধু এই সুযোগ ভোগ করার জন্য। কারণ এখানে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয় না। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারও তেমন আসে না। যদি কোনো দিন শিক্ষা অফিসার আসার কথা থাকে, শিক্ষকরা আগে থেকে খবর পেয়ে উপস্থিত হয়ে যায় বিদ্যালয়ে। তাছাড়াও কয়েকজন সহকারী শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসারও কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
আরো পড়ুনঃ ১৮ বছর পর খুলল প্রাণহীন সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা মানসিক ভারসাম্যহীন একজন ব্যক্তি। প্রধান শিক্ষকের এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছামতো বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম প্রথম খবরকে বলেন, খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে পেরেছি। তাদের বিরূদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।