দেশের ২০ জেলায় বন্যায় এক হাজার ৪০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অবকাঠামো, আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, বই-খাতাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এ হিসাব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে জানা গেছে।
ডিপিইতে বুধবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত সারাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা থেকে দেখা গেছে, গত একমাসের বন্যায় সারাদেশে প্রায় এক হাজার ৪০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কবলে পড়েছে। বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ৮৬টি, কুড়িগ্রামে ৭৯, গাইবান্ধায় ৬২টি, নীলফামারীতে ৫৮, রংপুরে ৫২, বগুড়ায় ৫৫, জামালপুরে ১২৩, সিরাজগঞ্জে ৪৯টি, টাঙ্গাইলে ৪৫টি, মানিকগঞ্জে ৩১টি, ফরিদপুরে ৪৭টি, নেত্রকোনায় ৭৯, ফেনীতে ৪৯টি, মাদারীপুরে ৭২টি, রাজবাড়ীতে ৪৮টি, শরীয়তপুরে ৪১টি, ঢাকায় ৫৫টি, নওগাঁয় ৬৬টি, সিলেটে ৭২টি, সুনামগঞ্জে ৪১টি, পাবনায় ৩২টি, কিশোরগঞ্জে ৪৭টি, ফেনীতে ৫৮টি ও কক্সবাজারে ৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টির কারণে প্রতিদিন ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।
ডিপিইর দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তের পরিসংখ্যান প্রতিদিন ‘আপডেট’ হচ্ছে। বন্যার কারণে গত একমাসে সারাদেশে বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কোথাও বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে, কোথাও বিদ্যালয়ের মেঝে জলাবদ্ধ, আবার কোথাও ক্লাসরুম বা খেলার মাঠসহ অর্ধেক ভবন ডুবে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের মধ্যে পানি ঢুকে প্রয়োজনীয়পত্র নষ্ট হয়ে গেলেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এমন ২০টি জেলায় মোট এক হাজার ৪০০টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানিবন্দি অবস্থা তৈরি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ও ক্ষয়তির বিবরণ দিতে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) ডিপিই থেকে দ্বিতীয় দফায় মাঠ কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগেও একমাস আগে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। তারা বলছেন, সকল জেলা থেকে তালিকা পাওয়ার পর চূড়ান্তভাবে ক্ষতির হিসাব জানা যাবে।
বন্যায় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয় করতে ডিপিইতে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এজন্য বেশকিছু দফতর নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তবে বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সঠিক ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ডিপিইর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন।
বন্যায় স্কুল ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে ডিপিইর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপ-পরিচালক নুরুল আমিন প্রথম খবরকে বলেন, ‘বন্যায় চর এলাকা ও উত্তরবঙ্গের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি। তবে দেশের কোন জেলায় কী পরিমাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা উল্লেখ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠাতে দুই দফায় মাঠ পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন মাঠ পর্যায় থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় এক হাজার ৪০০টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সেসব বিদ্যালয়ের তালিকা ও ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পাঠালে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আনুমানিক ধারণা পাওয়া যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় নির্মাণে আমাদের জরুরি তহবিল রয়েছে।’
তবে ডিপিইর কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে যে পরিমাণ সরকারি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সংস্কার করতে প্রায় ২৭ কোটি টাকা লাগবে। তবে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। গত বছরও এ বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
ডিপিইর মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ প্রথম খবরকে বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পাঠানো হচ্ছে। পানি নেমে গেলে সেসব বিদ্যালয়ে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।’
তিনি বলেন, বন্যা মোকাবিলা করতে প্রতিবছর প্রায় শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ক্ষতি হিসাব করে সে পরিমাণ অর্থ বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হবে।