তীব্র শীতে কাঁপছে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা

শীতে কাঁপছে ভারত সীমান্তঘেঁষা জেলা ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার মানুষ। দুদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। সকাল কিংবা রাত সবসময় ঘন কুয়াশা। এতে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া রোববার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে হিমেল হাওয়া বইছে। এতে দুই জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, নদ-নদী, খাল-বিল ও ফসলি জমি। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাঁপছে দরিদ্র মানুষ। জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়া দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ সাধ্য অনুযায়ী নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছেন গরম কাপড়ে।

তবে গরম কাপড় না থাকায় অনেকে হালকা কাপড়েই বেরিয়ে পড়েছেন কাজের সন্ধানে। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই তাকিয়ে আছেন সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার অপেক্ষায়। অনেককেই খড় খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

ঝিনাইদহ সদরের নবগঙ্গা নদীর তীরে বসবাসরত নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমার নিজের জমি বলতে কিছুই নেই। নদীর পাড়ে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করি। আমি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। আমাদের কোনো শীতবস্ত্র নেই। শীতের কাপড়ের অভাবে খুব কষ্টে দিন পার করছি। কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না। কিন্তু শীতের কাপড় না থাকায় ঠান্ডায় কাজকর্ম করে খেতে কষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই শীতে আর জীবন বাঁচে না। এখন পর্যন্ত একটা গরম কম্বল কেউ দিলো না।

জেলা শহরের ওয়াজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পান দোকান দার শামিম আহম্মেদন বলেন, সকাল বেলা ঠাণ্ডার কারণে দোকানেই আসা যায় না। আবার আসলে দোকানে বসে থাকা যায় না। শীতের জন্য ক্রেতাশূন্য হয়ে থাকে।

সাবিব মিয়া নামের এক যুবক বলেন প্রচণ্ড শীতে সবাই কাবু হয়ে পড়েছে। রাস্তার পাশে দেখি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। আমিও আগুনের কাছে এসে দাঁড়ালাম শরীরটা গরম করার জন্য।

এদিকে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীর ভিড়ও বেড়েছে। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. লিমন পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। তাদের মধ্যে শিশু আর বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। অনেক ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

ঝিনাইদহ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. সালাহউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টি সীমা অনেকাংশে কমে আসছে। এর কারণে সামনের পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় বাসস্ট্যান্ডে অবস্থানরত ও মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকদের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় লাইট ব্যবহার ও গতিসীমা সীমিত রেখে বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গায়ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে হালকা বাতাস। এসব কারণে মাঘের শীত জেঁকে বসেছে। গত দুদিন যাবত রোদের দেখা মেলেনি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। এদিকে ছিন্নমূল মানুষের শীত নিবারণের জন্য জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন কম্বল বিতরণ করছেন।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. জামিনুর রহমান জাগো নিউজকে, রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকেই জেলাজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। আরও কয়েকদিন এ অবস্থা থাকতে পারে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top