ইসলামে ‘মূর্তি’ বানানো সম্পূর্ণ নিষেধ, ‘ভাস্কর্য’ নিষেধ নয় – মেজর মোহাম্মদ আলী

দেশে এখন মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে উত্তেজনা চলছে। বিষয়টির সঙ্গে হেফাজতিরা ইসলামকে জড়িয়ে ফেলেছে। প্রথমেই দুইটি শব্দ বুঝে নেওয়া যাক: মূর্তি ও ভাস্কর্য। 

মূর্তি বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”। মূর্তি দেবতার প্রতিনিধি। সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়।হিন্দুরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার পূজা করে থাকেন। মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন। ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।অর্থাৎ প্রতিমা হল মানুষ যার প্রতিকীকে সামনে রেখে আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ধর্মীয় বিধি মেনে পূজা করে ইত্যাদি।

ভাস্কর্য (ইংরেজি ভাষায়: Sculpture) ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলে।অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ঘণকের ন্যায় ভাস্কর্যকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সহ ত্রি-মাত্রিক হতে হবে। ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনের ন্যায় বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমূখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। রেনেসাঁ এবং আধুনিককালে এটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিসপত্র ভাস্কর্যের উদাহরণ। কিন্তু প্রায় চারশত বছর পূর্বে তুরস্কে ইসলামপন্থী দলের বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে সেখানে ভাস্কর্য শিল্পকলার তেমন উন্মেষ ঘটেনি।

মূর্তি আর ভাস্কর্যের মূল পার্থক্য হচ্ছে, ভাস্কর্যের সামনে উপাসনা কিংবা পূজা করা যায় না কেবল মাত্র সেটাকে একটা প্রতিকী হিসাবেই মেনে টিকেয়ে রাখা হয় এবং কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরের প্রতি ভাস্কর্য নিবেদিত নয়।অন্যদিকে,মূর্তি কেবলমাত্র প্রতিকী না এটাকে বিধি অনুযায়ী পূজাও করা হয়।

সকল ধর্মে মূর্তি নিষিদ্ধ এবং মূর্তি পূজা করা শির্ক। মহান আল্লাহতালা এই শির্ক করার জন্য, অনেক জাতি / গোত্রকে পৃথিবীতে থেকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

নবী মুহাম্মদ(স.) এবং হযরত ঈব্রাহিম (আ.) আদেশ অনুযায়ী, যদি সকল ভাস্কর্য(উপাসনা করা হয় না) ভেঙে ফেলা হতো, তাহলে হাজার বছর ধরে এখনও ভাস্কর্য দন্ডায়মান কিভাবে?

মূর্তি(দেবতার প্রতিনিধি) ভাঙ্গা হয়েছে এবং নবী মুহাম্মদ(স.) এবং হযরত ইব্রাহিম(আ.) নিজ হাতে মূর্তি ভেঙেছেন। হযরত ঈব্রাহিম (আ.) অনেক পরে, হযরত সুলাইমান(আ.) এসেছিলেন।  কোরআনের আয়াত, হযরত সুলাইমান(আ.) এর সময়ের ভাস্কর্য নিয়ে। এখানে মূর্তির কথা বলা হয় নাই। কারনে ইসলামে মূর্তি নিষেধ করা হয়েছে।

“তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী উপাসনালয় ও দুর্গ,ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! (এসব নেয়ামতের জন্য) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।  (যদিও) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” (সূরাঃ ৩৪/ সাবা :১৩)

১। ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, মিশর / ইরাক / মরক্কো / স্পেন / তুরস্ক / জর্ডান/ সিরিয়া/ ফিলিস্থান/ লিবিয়া / আলজেরিয়া সহ আরো দেশ সমুহ, বিশ্ব নবী মুহাম্মদ(স) এবং ইস্লামী খিলাফতের শাসন আমলে, "ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয় নাই"। মূর্তি ( দেবতার প্রতিনিধি ) ভাঙ্গা হয়েছে এবং মুহাম্মদ(স.) নিজেও ভেঙেছেন। 

২। হযরত ইব্রাহিম(আ.)- ইহুদী-খ্রিষ্টান-মুসলমান, সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পিতা। ইব্রাহিম (আ.) এর আদেশ এর পর হযরত মুসা(আঃ)- হজরত ইউসুফ(আঃ) আরো অনেক নবী, মিশর/ ফিলিস্তান/সৌদি আরব/ ইরাক / শ্যাম দেশে সহ অন্যান্য প্রাচীন জনপদে এসে ছিলেন।

৩। যদি ভাস্কর্য ভাঙ্গার আদেশ দিতেন, তাহলে প্রাচীন ভাস্কর্য গুল এখনো কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে ? ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয় নাই। মূর্তি ( দেবতার প্রতিনিধি ) ভাঙ্গা হয়েছে এবং ইব্রাহিম (আ.) নিজেও ভেঙেছেন। 

নোট:- আমরা তথ্যে কোন ভুল থাকলে, দয়া করে বলবেন। ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।

লেখকঃ মেজর মোহাম্মদ আলী সুমন (অব:), চেয়ারম্যান, দাউদকান্দি উপজেলা, কুমিল্লা।

সদস্য – বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা জেলা উত্তর।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top