মহান স্বাধীনতা বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এই দিবসটি বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন।  এই দিন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরাধীনতার গ্লানী মুছে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর আগে ৩ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির জনক ঘোষণা করা হয়। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চ  স্বাধীনতার ঘোষণা এক ঐতিহাসিক প্রোপট।

পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছর উপমহাদেশের মানুষদের ব্রিটিশরা শাসন-শোষণ নির্যাতন করে। এরপর এই নির্যাতনের হাত থেকে উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও ভ্রান্ত-দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তান নামে একটি অসম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। বাঙালির জীবনে আবারও নেমে আসে শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতনের খড়গ।

পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামে বাঙালি জাতি। মহান ভাষা আন্দোলন, ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ৭১ এ উপনীত হয়। আর বাঙালির এই আন্দোলন ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন-সংগ্রামের একপর্যায়ে স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন তিনি।   

অপরিসীম সাহস, দৃঢ় চেতনা, মনোভাব ও আপোষহীন নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়ে ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীণ রেসকোর্স) বক্তব্যে বাঙালিদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে মরণপন সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল। এ ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। আর পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী আলোচনার নামে প্রহসন চালাতে থাকে।

একপর্যায়ে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ করে। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। এই গণহত্যা শুরু হওয়ার পরপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। এই ঘোষণায় বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।  

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী গৌরবোজ্জ্বল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় লাভ করে।

বাঙালি জাতি বিজয়ের ফলে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমাদের এখন দেশ স্বাধীন, আমরা স্বাধীন, আমাদের  নির্বাচিত গণতান্ত্রীক সরকার আছে, আমাদের দেশে আইন আছে, বিচার বিভাগ আছে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব আছে। আমাদের মেধা আছে, সম্পদ আছে, প্রযুক্তি আছে, জনশক্তি আছে,  পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত আমাদের বিপদে আপদে পাশে রয়েছে। আমারা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে নিরাপদে ও শান্তিতে বাংলাদেশে বাস করবো ১৬ কোটি মানুষের এই প্রত্যাশা।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সম্পাদক ও প্রকাশক – প্রথম খবর ডটকম

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top