সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না: ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যাঁরা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।’

আবদুল কাদের মির্জার সাম্প্রতিক এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় আবদুল কাদের মির্জাকে বলতে শোনা যায়, ‘নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সত্য। কিন্তু আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও অনেক লোক জড়ো করতে পারব। না হয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেব।’

আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এ উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরভবন চত্বরে ইশতেহার ঘোষণাকালে ওই বক্তব্য দেন তিনি। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেন।

আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি।

আবদুল কাদের মির্জা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘নোয়াখালীর রাজনীতি অতি কষ্টের। এই বৃহত্তর নোয়াখালীতে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, বিএনপির মওদুদ আহমদ সাহেব, জামায়াতের আবু নাছের সাহেব- এই তিনজন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের সমমর্যাদার কেউ নেই। কোনো নেতা সৃষ্টি হয়নি। এখন তো এদের নাম বিক্রি করি। তাঁরা তো অসুস্থ, তাঁরা মারা গেলে কার নাম বিক্রি করবে, কেউ নাই।’

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, দলের প্রয়াত সাবেক তিন নেতা আবদুল মালেক উকিল, শহীদ উদ্দিন এস্কেন্দার ও নুরুল হক সাহেবের নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি চলছে। এই অপরাজনীতি চলতে পারে না। তাই তিনি সবাইকে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

রবিবার সকালে উপজেলা পরিষদের এক সভায় আবদুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিও এখন ভাইরাল। গতকাল তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, গত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সহধর্মিণীর সঙ্গে চরম দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন নেতা ষড়যন্ত্র করে আমার এখানে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অস্ত্র পাঠিয়েছেন।’ বক্তব্যের এই পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ‘আর কিছু বলবেন কি না’ জানতে চাইতেই আবদুল কাদের ডিসির বিরুদ্ধে বক্তব্যে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সভা থেকে বেরিয়ে আবদুল কাদের মির্জা পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে তিনি শহরের জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নেন। ততক্ষণে সেখানে হাজির হন কয়েক হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে হাতে ঝাড়ু নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। বিক্ষোভকারীরা ডিসি, এসপির অপসারণ দাবি করে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অশালীন স্লোগান দেন।

পরে দুপুরে জিরো পয়েন্টে আবদুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, কিন্তু ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়নি। তাই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় থাকবেন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top