অনাস্থা-বিভাজনে নিষ্ক্রিয় ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। শরিকদের মধ্যে আস্থার সংকট, দলে দলে বিভাজন এবং অনীহার কারণে দীর্ঘদিন কর্মসূচিহীন এই জোট। কেউ কেউ ‘বিলুপ্তপ্রায়’ও বলছেন গণফোরাম-বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্টকে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আওয়ামী সরকারবিরোধী জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে এই জোট গঠিত হয়। পরে সেখানে যোগ দেয় বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ গরম করে রাখে এ জোট।

কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও জোটের বিজয়ীদের এমপি পদে শপথগ্রহণসহ তৎপরবর্তী নাটকীয়তায় এই জোটে আস্থার সংকট ও বিভাজন দেখা দেয়। জোট থেকে বেরিয়ে যায় কাদের সিদ্দিকীর দল। জেএসডি এবং গণফোরাম পড়ে ভাঙনের মুখে। ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে অনীহা দেখা যায় বিএনপিরও। ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় পড়ে এই জোট।

২০১৮ সালে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

সূত্রমতে, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেও ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়া নিয়ে শুরু হয় মতবিরোধ। কয়েক দফা আলোচনার পর শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জোট। নির্বাচনের পর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েও দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে।

এরপর থেকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বৈঠক কমতে থাকে, থেমে যায় কর্মসূচিও। সবশেষ ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর শরিক দল নাগরিক ঐক্য নির্বাচন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করে। কর্মসূচিতে অন্যান্য শরিকদের উপস্থিতি থাকলেও বিএনপির কাউকে সেদিন দেখা যায়নি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নিষ্ক্রিয়তা প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখন আর কোনো জোট নয়, একসঙ্গে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।’

গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ছিল আমাদের নির্বাচনী জোট। আমরা পরে এটা নিয়ে সেভাবে আর অগ্রসর হইনি। আমাদের লক্ষ্যও ছিল না এটা। কর্মসূচিও দেওয়া হয়নি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় কেন জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কেউ তো কোনো উদ্যোগ নেয়নি, ফলে এর কোনো কার্যক্রম নেই।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি জনসভার মঞ্চ

নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে এই পরিস্থিতি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিডারশিপের কোনো ঘাটতি নেই, সবাই তো আছেন।

মান্না বলেন, কেউ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন, আবার কেউ গোছাচ্ছেন নিজের দল। কাদের সিদ্দিকী চলে গেছেন। অনেক কারণেই নিষ্ক্রিয়।

ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় কেন জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, কার্যক্রম থাকলে তো নিষ্ক্রিয় হবে স্বাভাবিক। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে জাতীয় ঐক্য ডিমান্ড করে এবং একটা জাতীয় সরকারের বক্তব্য আলরেডি আমি মাঠে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এটা যে হুবহু মানতে হবে তা নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top