আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের দুই নেতা-কর্মীকে হত্যার অভিযোগে মামলা হওয়ায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তিনজন কাউন্সিলর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে তাঁরা নগর ভবন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। এতে স্থানীয় লোকজন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নিহত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, অবিলম্বে এসব কাউন্সিলরকে দলীয় ও প্রশাসনিক পদ থেকে বাদ দিতে হবে। তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
তাঁরা হলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস সত্তার, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর মো. আবুল হাসান। এর মধ্যে কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনকে কেন্দ্রীয় যুবলীগ হত্যাকাণ্ডের পর সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ নভেম্বর সকালে সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে পুরোনো চৌয়ারা ধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদূরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় আবুল হাসান, আবদুস সত্তারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। এরপর থেকে তাঁরা পলাতক আছেন।
চলতি বছরের ১০ জুলাই দুপুরে পূর্বশত্রুতার জের ধরে কুমিল্লা নগরের চাঙ্গিনী এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী আক্তার হোসেনকে (৫৫) মসজিদ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে প্রকাশ্যে হত্যার অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন ও তাঁর ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় আলমগীর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এর আগেও দলীয় কর্মী হত্যার ঘটনায় কাউন্সিলরদের নাম এসেছে। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে নগরের বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় সামবকসী এলাকার রেজাউল করিম ও কালিকিংকরপুর গ্রামের মো. কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাউন্সিলর আবদুস সত্তারের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি করেছে দেলোয়ারের পরিবার। তবে সত্তারের নাম এজাহারে নেই। তিনি এলাকাতেই ছিলেন।
দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলার বাদী ও দেলোয়ারের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তত্পর নয়। রাজনৈতিক কারণে আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। অথচ তাঁর ভাইও দল করতেন।
মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, সব কটি ঘটনায় দলীয় বা পারিবারিক কোন্দল রয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আবদুস সত্তারের কাছে পরাজিত হন দেলোয়ার হোসেন। এরপর তাঁদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরপর তিনি খুন হন। অন্যদিকে আলমগীর হোসেনের পক্ষে কাজ করতেন আওয়ামী লীগের কর্মী ও তাঁর চাচাতো ভাই আক্তার হোসেন। জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আক্তারকে হত্যা করেন আলমগীরের পরিবারের সদস্যরা। অন্য ঘটনায় নিহত জিল্লুর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। এরপর চৌয়ারা গরু বাজার ও এলাকায় আধিপত্য নিয়ে আবুল হাসান ও তাঁর বাহিনীর সদস্যদের হাতে খুন হন।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অভিযুক্ত তিন কাউন্সিলরও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে আছেন। তাঁরা আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর তিন কাউন্সিলর আর নগর ভবনে আসেননি। জনভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য কাজ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও তিনি করে দিচ্ছেন। ওয়ার্ডের সচিবেরা সহায়তা করছেন। সুত্রঃ প্রথম খবর