রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে 'শিশুবক্তা' মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করেছে র্যাব-১৪। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামের নিজ বাড়ির বসতঘরের দরজা ভেঙে তাকে আটক করে র্যাব।
এ সময় তার বড়ভাই এবং এক ভাতিজাকেও আটক করা হয়। তবে বড়ভাইকে ছেড়ে দিলেও রফিকুলসহ তার ভাতিজাকে আটকে রাখে র্যাব। তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী। তিনি জানান, বর্তমানে তিনি র্যাব হেফাজতে রয়েছেন।
রফিকুল ইসলাম লেটিরকান্দা গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে। তারা পাঁচ ভাই-বোন। তাদের মধ্যে মাদানী সবার ছোট। তার বাবার নাম মৃত শাহাবুদ্দিন। মাদানী নেত্রকোনার মালনী এলাকায় জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পরে ঢাকায় চলে যান। সেখানে লেখাপড়া করাকালেই 'শিশুবক্তা' হিসেবে পরিচিতি পান।
রফিকুল ইসলাম মাদানীর বড়ভাই রমজান মিয়া জানান, মাদানী মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ধর্মীয় সভা করে নিজ বাড়িতে আসেন। রাতের খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে যান। রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে র্যাব পরিচয়ে কিছু লোক প্রায় ১৯টি গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে। পরে রফিকুল ইসলাম মাদানী, তার বড়ভাই বকুল মিয়া (৩৭) ও তার দূরসম্পর্কের ভাতিজা এনামূল হককে (২৮) তুলে নেয়। পরে বকুল মিয়াকে ওই রাতে ছেড়ে দিলেও অন্যদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
রমজান মিয়ার দাবি, এ সময় মাদানীর ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোনসহ তাদের পরিবারের ছয়টি মুঠোফোন জব্দ করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফোনগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে মাদানীকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে আজ বুধবার বিকেলে নেত্রকোনা প্রেস ক্লাব ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা মাদানীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে বলেন, তাকে মুক্তি না দেওয়া হলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা শহরের মালনী এলাকায় জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর কাইয়ুম, হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আসাদুর রহমান আকন্দ, মাওলানা তোবাইদ কাসেমী, আতাউর রহমান, গাজী আব্দুর রহিম, মাদানীর বড়ভাই রমজান মিয়া, চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম প্রমুখ। হেফাজতের নেতারা জানান, রফিকুল ইসলাম মাদানীও তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, রফিকুল ইসলাম র্যাব হেফাজতে রয়েছে। এর আগে গত ২৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের মোদিবিরোধী মিছিল থেকে রফিকুল ইসলামকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।