টিসিবির পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে সবাই

বাজারে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা। সেখানে ২০ টাকা কেজিতে বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তারপরও টিসিবির পেঁয়াজ নিতে আগ্রহী নন ক্রেতারা। অন্যদিকে নিজেদের বরাদ্দের পুরোটা বিক্রির জন্য ডিলাররা পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য পণ্য দিচ্ছেন না।

শুধু দামের জন্য টিসিবির পেঁয়াজে ক্রেতার অনীহা সেটাও নয়। টিসিবির পেঁয়াজ অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেক ক্ষেত্রে পচাও। সেজন্য এ পেঁয়াজ নিতে চায় না কেউ। তিন-চার কেজি পেঁয়াজ কিনলে এর মধ্যে প্রায় কেজিখানেক পেঁয়াজ খাওয়া যায় না-এমন অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা।

অন্যদিকে সংকটের শঙ্কায় বেশ কয়েক মাস আগে পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবি। সেসব এখন দেশের বন্দরে এসে পৌঁছাচ্ছে। ফলে এসব পেঁয়াজ বিক্রি না করেও উপায় নেই সংস্থাটির।

এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির  বলেন, টিসিবি পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি করেছে বলেই বাজারে পেঁয়াজের সংকট হয়নি। মানুষ কম দামে পেঁয়াজ খেতে পারছে।

পেঁয়াজের মান নিয়ে তিনি বলেন, এসব পেঁয়াজ বিদেশ থেকে ফ্রিজিং করে আনা। সেটা যখন বস্তা থেকে খোলা হয়, কিছুটা ভেজা থাকে। তবে সেগুলো কয়েক ঘণ্টা বাতাসে শুকালেই ঠিক হয়ে যায়।

তিনি বলেন, তারপরও কোনো পেঁয়াজ পচা থাকলে সেটা বাদ দিয়ে বিক্রির জন্য ডিলারদের বলা হয়েছে। পচা পেঁয়াজ বেছে আলাদা করে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া আছে। পচা থাকলে এর সঙ্গে অতিরিক্ত পেঁয়াজও ডিলারদের দেওয়া হয়, যাতে নষ্ট পেঁয়াজগুলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা না হয়।

এরপরও পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বলে টিসিবির অনেক ডিলারের অভিযোগ। শনিবার রামপুরা বাজারে ট্রাকসেলে থাকা কাসেম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, গুদাম থেকেই পচা পেঁয়াজ দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের কাছে সেগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে। না হলে যা অবিক্রীত থাকবে সেটা লোকসান হবে।

এমন পরিস্থিতিতে টিসিবির ট্রাক থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। প্যাকেজ সিস্টেমে পেঁয়াজ না নিলে অন্য কিছু বিক্রি করছে না। বর্তমানে প্যাকেজগুলোর সঙ্গে তিন-চার কেজি পেঁয়াজ বাধ্যতামূলকভাবে নিতে হচ্ছে।

বাধ্য হয়ে এ পচা পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে এমন দাবি করে রাজধানীর রামপুরার সুজানা আক্তার বলেন, তেল আর চিনি দরকার ছিল। কিন্তু ওরা পেঁয়াজ না নেওয়ায় কিছুই দিচ্ছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে চার কেজি পেঁয়াজ নিয়েছি। এর মধ্যে অধিকাংশই পচা।

এসময় ওই ট্রাকের পাশে অনেককে পেঁয়াজ বেছে পরিবর্তন করে নিতে দেখা গেছে। তবে পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে সামান্য।

সুজন নামের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, মাঝে মাঝে ভালো পেঁয়াজ থাকে। তবে আজ পেঁয়াজ কালো দাগ পড়া, বেশি পচা। ওপরের অংশ ফেলে খেতে হয়। আবার কিছু বস্তায় বড় পেঁয়াজ আছে। সেগুলো ভালো। আমরা চেষ্টা করছি ভালো-খারাপ মিলিয়ে দিতে।

ডিলাররা জানান, এখন প্রতি ডিলারকে সাড়ে ৭০০ কেজি পেঁয়াজ, আড়াইশো কেজি ছোলা, ৫০০ লিটার তেল, ৫০০ কেজি করে চিনি ও ডাল এবং ২৫০ কেজি খেজুর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা একজন ক্রেতার কাছে সবোর্চ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি করে চিনি, ডাল, ছোলা এবং এক কেজি খেজুর প্যাকেজ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।

বর্তমানে টিসিবির প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা, ছোলা ৫০ টাকা, প্রতি লিটার তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনির দাম ৫৫ টাকা এবং খেজুর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

Share this post

PinIt
scroll to top