প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে নতুন যা বললেন গণশিক্ষা সচিব

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) নীতিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিচালনায় বার্ষিক উন্নয়ন বাবদ অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ব্যয়ে নতুন নিদের্শনা আসছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে উন্নয়নের পাশাপাশি মেডিকেল সরঞ্জাম ক্রয়ের নির্দেশনা যুক্ত করা হবে। নীতিমালা সংশোধনে বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে বলে জানা গেছে।

করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিদ্যালয় পরিচালনায় ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্যবিধিতে এসমএসির জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে থার্মোমিটার ক্রয়, পানির ব্যবস্থা, ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগার স্থাপন বা সম্প্রসারণ করা, মেয়েদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, খোলার আগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ শ্রেণিকক্ষ ও টয়লেটসমূহ স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত করা। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জীবাণুনাশক, সাবানসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা উপকরণ সংগ্রহ ক্রয় করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় চলাকালীন প্রতি শিফটে অন্তত একবার পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা, প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কার এবং আবর্জনা সংরক্ষণকারী পাত্র জীবাণুমুক্ত করা, প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান ও সচেতন করে তোলা, কেউ অসুস্থ হলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি থেকে বিরত রাখা, অসুস্থ সন্তানকে বিদ্যালয়ে না পাঠানাের জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করা, অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে কোনো শিক্ষার্থী যেন শ্রেণি মূল্যায়নে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। প্রতিনিয়ত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কারসহ অন্যসব স্বাস্থ্যবিধি আবশ্যিকভাবে মানতে বলা হয়েছে। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ও নাক ঢাকতে টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করতে হবে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের মাঝে লিফলেট, পোস্টার ও সামাজিক যোগাযােগ মাধ্যম ব্যবহার করে সচেতন করতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম পদ্ধতি বদলে যাবে। সকল সরকারি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে থার্মোমিটার, মাস্ক, সাবান, জীবাণুনাশক উপাদান ক্রয়সহ পোস্টার, লিফলেট তৈরি করতে হবে। বিষয়গুলোত এসএমসি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জানা গেছে, প্রতিবছর বিদ্যালয় উন্নয়ন বাবদ স্লিপ মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়ে থাকে। এ অর্থ দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ বিদ্যালয় উন্নয়নের কাজ করেন এসএমসির সদস্যরা। বর্তমানে ক্রয় সংক্রান্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মতি বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে এমএসসির নীতিমালায় তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেনের সভাপত্বিতে একটি সভা ডাকা হয়েছে।

আকরাম-আল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে এসএমসি সদস্যদের বেশ কিছু কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে এসএমসি নীতিমালা সংশোধনের কাজ শুরু করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এসএমসির সদস্যরা কী কী ও কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তা নীতিমালায় যুক্ত করা হবে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বার্ষিক উন্নয়ণের অর্থ দিয়ে মেডিকেল সরঞ্জাম ক্রয়সহ কী কী খাতে ব্যয় করতে হবে তা যুক্ত করতে সভা ডাকা হয়েছে। সভায় আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top