বরিশালে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিশু শিক্ষার্থীকে ভেতরে রেখে স্কুলের তালাবদ্ধ করে রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে শিক্ষার্থীদের চিৎকার ও কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাদের উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুল পরিদর্শন করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
গত বুধবার বিকেলে বরিশাল নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুদঘাটা এলাকার ইন্দ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার শিকার স্কুলটির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজান শিকদারের মা শিরিন আক্তার আখি প্রথম খবর'কে জানান, বুধবার স্কুল ছুটির সময়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষিকা মাকসুদা বেগম তার ছেলে মারজান ও চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মুনমুনকে অংক শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি যেতে নিষেধ করে। অপরদিকে শিক্ষিকা মাকসুদা নিজেই বাড়ি চলে যান। এদিকে দুই শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে অংক করতে থাকে। অপর দিকে প্রধান শিক্ষিকাসহ সকলে স্কুল থেকে চলে গেলে দপ্তরি স্কুল গেটে তারা মেরে চলে যায়। তারা অংক শেষ করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেটে তালা মারা দেখে আতঙ্কিত হয়ে যায়।
প্রায় এক ঘণ্টা পর তাদের চিৎকার ও কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে স্থানীয় একটি মেয়ে এগিয়ে আসে। তবে স্কুলের গেটে তালা থাকায় ভিতরে যেতে পারেনি সে। পরে মারজানের কাছ থেকে তার বাবা জামাল শিকদারের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করে। তার মাধ্যমে মারজানের মা শিরিন আক্তার জানতে পেরে স্কুলে ছুটে আসেন। কিন্তু তখনও স্কুলের গেটে তালা লাগানো ছিলো।
শিরিন প্রথম খবর'কে জানান, দৌড়ে স্কুলের দপ্তরি ইমরানের বাসায় গেলে ইমরান তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এক পর্যায় ইমরান স্কুলের গেট খুলে দেয়। এরই মধ্যে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে। জনরোষ থেকে বাঁচতে দপ্তরি স্কুলের ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখে।
মারজানের মা আরও জানান, সে রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার চিৎকার দিয়ে ওঠে। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা মনে করেন, যদি রাত পর্যন্ত শিশু দুটি ওখানে থাকতো তবে অন্ধকারে আতঙ্কিত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। তারা এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শান্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার প্রথম খবর'কে বলেন, এটি একটি গর্হিত কাজ হয়েছে। ঘটনা জানতে বৃহস্পতিবার স্কুল পরিদর্শন করেছি। সেই সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আগামী রোববারের মধ্যেই এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।