প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেড়েছে টাকাঃ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক

করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও প্রাথমিকের উপবৃত্তির টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ।

সোমবার শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুনঃ  প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন নিয়ে বড় সুসংবাদ দিলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ‘করোনাকালে উপবৃত্তি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এটি অনুমোদন করে দিয়েছেন। টাকার হার আগের থেকে বেড়েছে। পাশাপাশি কিট অ্যালাউন্স (জামা-কাপড়, জুতা-ব্যাগ) এগুলোর জন্যও বরাদ্দ বেড়েছে। আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্মানিত শিক্ষকগণ কাজ করে যাচ্ছেন। তারা করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই শিশুদের সচেতন করা, অভিভাবকদের সচেতন করাসহ তাদের নিরাপত্তা, আনন্দের বিষয়টি নিশ্চিতে কাজ করছি। সংসদ টিভিসহ বিভিন্নভাবে ক্লাস চলছে। শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের শিক্ষকগণ ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ করে চলেছেন।’

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পরীক্ষা নিয়ে ভাবছি না। আমরা বলছি মূল্যায়ন।’

এসময় করোনায় প্রাথমিক শিক্ষায় কয়েকটি চ্যালেঞ্জের বিষয় তুলে ধরা হয়-

১) টেলিভিশন ও অনলাইন শিক্ষায় মফস্বলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। এতে ঝরে পড়ার হার বাড়বে।

২) প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

৩) স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ও সিলেবাস নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

৪) গ্রামের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পড়ালেখার বাইরে অবস্থান করছেন, এতে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়বে।

৫) শহরের বস্তিবাসী, কর্মজীবী শিশু, চরাঞ্চল, পাহাড়ি ও প্রতিবন্ধী শিশুরা আগের চেয়েও পিছিয়ে পড়ছে।

৬) কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের খোঁজ নিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এর উত্তরণে করনীয় হিসেবে সুপারিশ করা হয়-

১) করোনার প্রাদুর্ভাবের অবশিষ্ট সময়কালে টেলিভিশন ও অনলাইন শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের সংযোগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে টেলিভিশন পাঠদানকে আরো আনন্দদায়ক ও শিশুতোষ করার পাশাপাশি তা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর কৌশল বের করতে হবে।

২) পিইসি পরীক্ষা বন্ধের দাবি উঠেছে, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

৩) স্কুলের অভ্যন্তরীন পরীক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি তা অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করতে হবে। বিশেষ করে করোনায় চলে যাওয়া সময়ের বিপরীতে সিলেবাস সংক্ষেপ করা হবে কিনা বা অবশিষ্ট সময়ে কতটুকু পড়ানো হবে- তা প্রকাশ করা জরুরি।

৪) দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু রাখতে চাইলে এগুলোর ক্ষেত্রে নিবন্ধন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। নিবন্ধনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া জরুরি।

৫) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের আইসিটিতে দক্ষ করে তুলতে হবে।

৬) শহরের বস্তিবাসী, কর্মজীবী শিশু, চরাঞ্চল, পাহাড়ি ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭) করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রাথমিক শিক্ষকদের আগের চেয়ে বেশি আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ জন্য তারে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।

৮) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কমিটি গঠন করতে পারে। কমিটির কাজ হবে স্কুল ঝরে পড়তে পারে এমন পরিবার চিহ্নিত করে তাদের উপবৃত্তির টাকা কমপক্ষে মাসিক ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা।

৯) এছাড়া ঝরে পড়া শিশুদের ডাটাবেজ করে তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top