চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে পেট্টল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় রাফেল (৩০) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ তাকে আটক করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কি।
আটক রাফেলের বাড়ি (৩০) রাঙ্গুনিয়া থানার সন্দ্বীপ পাড়া এলাকায়।
ওসি মাহবুব মিল্কি বলেন, ‘সাত বছর আগে ইয়াছমিনের সঙ্গে রাফেলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে অভিযুক্ত তরুণ প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতো। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুক নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জেরে শুক্রবার ভোররাতে স্ত্রীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় রাফেল। দগ্ধ গৃহবধূ ইয়াছমিন বর্তমানে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শামীম আনোয়ার জানান, ‘যৌতুক না পেয়ে শুক্রবার ভোরে স্ত্রীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় রাফেল। গায়ে আগুন দেয়ার সময় অসহায় ইয়াসমিন চিৎকার করে ৭ বছরের সংসার এবং ৪ বছর বয়সী সন্তানের দোহাই দিয়ে স্বামীর কাছে আকুতি জানাচ্ছিলেন যাতে তাকে পুড়িয়ে মারা না হয়। প্রাণে বাঁচতে ওই নারী ঘরের বাইরে বেরোতে চাইলেও বাধা দেয় অভিযুক্ত স্বামী। এক পর্যায়ে শরীরে লেগে থাকা পেট্রল ফুরিয়ে গেলে ইয়াসমিনে আগুনের কবল থেকে রক্ষা পান।
কিন্তু এবার নতুন খেলায় মাতে স্বামী রাফেল। স্ত্রীর পোড়া শরীর থেকে কাবাব করা মুরগির মতো করে চামড়া তুলে নিতে শুরু করে দুই হাত দিয়ে। তার হাতের ঘষায় খসে পড়তে শুরু করে ইয়াসমিনের পুড়ে যাওয়া চামড়া। যন্ত্রণায় প্রাণপনে চিৎকার করতে থাকেন ইয়াসমিন। কিন্তু তাতেও রাফেলের নিষ্ঠুরতায় কমেনি।
উল্টো মেয়ের যন্ত্রণার খানিকটা ভাগ বাবা-মাকেও দিতে ফোন করেন ইয়াসমিনের বাবার বাড়িতে।
গভীর রাতে মেয়ে জামাইয়ের ফোন পেয়ে উৎকণ্ঠিত শাশুড়ি ফোন তুলতেই তাকে বলা হয়, ‘তোর মেয়েকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি। এসে নিয়ে যা।’
রাফেলের পাশবিকতা-হিংস্রতার এখানেই শেষ নয়। পৈশাচিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে আর্তচিৎকার করতে থাকা স্ত্রীকে রেখেই পাশের কক্ষে গিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েও পড়ে সে।
এএসপি সার্কেল শামীম আনোয়ার বলেন, ‘খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে বর্বর রাফেলকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু আটকের পর রাফেলের আচরণ ছিল আরও নিষ্ঠুর। স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার পরেও তার ভেতর কোনো ভয় কিংবা গ্লানি ছিল না। উল্টো থানা হাজতে খোশমেজাজের সঙ্গে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার আবদার করে পুলিশের কাছে।’
চমেক বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন বলেন, ‘আগুনে ইয়াছমিনের শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। পা, উরুসহ নিচের অংশ প্রায় পুরোটাই পুড়ে গেছে।’