হোল্ডিং কর আদায়ে এগিয়ে ডিএসসিসি, পিছিয়ে ডিএনসিসি

# দুই সিটি করপোরেশনের নতুন ৩৬ ওয়ার্ড

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং জরিপের কাজ শেষ করেছে সংস্থাটি। জরিপ অনুযায়ী এই ওয়ার্ডগুলোর হোল্ডিং সংখ্যা ৬৮ হাজার ৮৯টি। এখন এসব হোল্ডিং থেকে কর আদায় করেছে ডিএসসিসি।

তবে জরিপে পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তাদের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে এখনও হোল্ডিং জরিপের কাজ শেষ হয়নি। ফলে নতুন এলাকাগুলোতে কত সংখ্যক হোল্ডিং রয়েছে তা নির্ধারণ হয়নি। এতে সংস্থাটির রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টদের দাবি, তাদের জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নাগরিকদের হোল্ডিং নম্বর দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

২০১৬ সালের জুনে ঢাকা মহানগরের চারপাশের ১৬টি ইউনিয়নকে ৩৬টি ওয়ার্ডে ভাগ করে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর মধ্যে বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে ডিএনসিসির ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। এই ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে নতুন পাঁচটি অঞ্চলও করা হয়েছে।

অন্যদিকে ডিএসসিসিতে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মাণ্ডা, দক্ষিণগাঁও এবং নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে পৃথক ১৮টি ওয়ার্ডে (পাঁচটি অংঞ্চল) ভাগ করা হয়। এতে ঢাকার আয়তন বেড়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায়। এখন ঢাকা শহরের আয়তন ২৭০ বর্গ কিলোমিটার। আগে ছিল ১২৯ বর্গ কিলোমিটার।

ডিএসসিসি: ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ার দুই বছর পর হোল্ডিং সংখ্যা নির্ধারণে জরিপ শুরু করে ডিএসসিসি। এই জরিপে ৬৮ হাজার ৮৯টি হোল্ডিং পাওয়া যায়। এর মধ্যে অঞ্চল-৬ এর ৭০, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে হোল্ডিং সংখ্যা ১০ হাজার ৭৬০টি, অঞ্চল-৭ এর ৭১, ৭২, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাত হাজার ৬৮টি, অঞ্চল-৮ এর ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ হাজার ৯০টি, অঞ্চল-৯ এর ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ হাজার ৭৭২টি, অঞ্চল-১০ এর ৫৮, ৫৯, ৬০ ও ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬ হাজার ৩৯৯টি হোল্ডিং রয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এসব ওয়ার্ডের বাণিজ্যিক হোল্ডিং থেকে নির্ধারিত কর আদায় শুরু করে ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ। এর এক বছর পর আবাসিক হোল্ডিং থেকে কর আদায় শুরু হয়। তবে এই ১৮টি ওয়ার্ডে কয়টি আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং রয়েছে তার পৃথক সংখ্যা দিতে পারেনি সংস্থাটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন ডিএসসিসিতে মোট ১০টি অঞ্চলের অধীনে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। আগের পাঁচটি অঞ্চলে রয়েছে ৫৭টি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৮৪ হাজার। নতুন হোল্ডিংগুলো মিলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ৫২ হাজারে।

তিনি বলেন, এখন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং কর বকেয়া নেই। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ওই ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা কর আদায় করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে এই খাত থেকে ৩৭৫ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু আবাসিক হোল্ডিংয়ের মালিক হোল্ডিং নির্ধারণ নিয়ে ডিএসসিসিতে আপিল করেছেন। তাদের আপিল নিস্পত্তি হলে বাকি করও আদায় হয়ে যাবে।

কর্তৃপক্ষের বিধি নিষেধ থাকায় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্তকর্তা আরিফ হোসেন। তিনি সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছেরের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে আবু নাছের জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনার পরপরই আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং নির্ধারণ এবং কর আদায়ে শুরু করে ডিএসসিসি। ডিএসসিসি রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময়ে কাজটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের অনেক এলাকা এখনো ফাঁকা (খালি জমি)। এসব এলাকায় ঘরবাড়ি করা হলে ক্রমান্বয়ে সেগুলোতে হোল্ডিং নম্বর দেওয়া হবে।

ডিএনসিসি: ডিএনসিসিতিতে আগে ৩৬টি ওয়ার্ড ছিল। পরে এর সঙ্গে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যোগ হয়। তবে এখনো এসব ওয়ার্ডে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক হোল্ডিং নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে কোন ওয়ার্ডে কতটি হোল্ডিং রয়েছে তা জানা যায়নি।

ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন ওয়ার্ডগুলো যুক্ত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে বাণিজ্যিক এবং ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে আবাসিক হোল্ডিং থেকে কর আদায়ে নির্দেশনা দেয় সরকার। সে অনুযায়ী হোল্ডিং নির্ধারণে স্ব স্ব আঞ্চিলক কার্যালয় থেকে জরিপ শুরু হয়। কিন্তু করোনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে এখনো এই জরিপ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে করও আদায় করতে পারেনি ডিএনসিসি। এতে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অঞ্চিলক দপ্তরগুলো থেকে হোল্ডিং নির্ধারণের কাজ চলছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কর আদায়ও শুরু হয়েছে। তবে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে কতো সংখ্যক হোল্ডিং রয়েছে, তার সমন্বিত হিসাব এখনও হাতে পাইনি।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top