ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টেলিকম অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বিটিআরসির সোশ্যাল অবলিগেশন তহবিলের (এসওএফ) অর্থায়নে হাওর, প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার ৬৫০টি স্কুলে এই প্রকল্প ২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব ক্লাসরুম ডিজিটাল হবে। এরমধ্যে ৩০টি স্কুলে শিশুরা বইবিহীন বা অনলাইনে ট্যাবে লেখাপড়া করতে পারবে। তাদের ক্লাসে ডিজিটাল টিভি, আইপিএস ও ইন্টারনেট থাকবে। তাদেরকে ২০২০ সালে ইনটেলের সঙ্গে উইটসা পুরস্কারপ্রাপ্ত ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়ে পাঠদান করা হবে। ডিভাইস ও ইন্টারনেট থাকলে শিশুরা বাড়িতে বসে বা অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে। বেসরকারিভাবে ২০০০ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেশে চালু হলেও সরকারিভাবে কোনও প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করে ডিজিটালযন্ত্রের সহায়তায় শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন এই প্রথম।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দানকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের মূলভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা আনন্দময় করে ডিজিটাল শিশু শিক্ষা পাঠ্যক্রম আবশ্যক। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের কোনও বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব-গোলাম মো. হাসিবুল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এম মনসুরুল আলম এবং টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মহসীনুল আলম বক্তৃতা করেন।
বর্তমানে প্রাক প্রাথমিকের তিনটি ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৫টিসহ মোট আটটি কনটেন্ট প্রাথমিক শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনের যাত্রায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কোভিডকালে বিনা মাশুলে ডাউনলোড করে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে এক বছরের পাঠ্যক্রম অনায়াসে একমাসে সম্পন্ন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল শিক্ষা প্রবর্তনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে অচল জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ঘরে বসে শিশুরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বড় দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে আমরা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বলেন, ‘শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে যাত্রা শুরু হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই যাত্রার সঙ্গী হতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
পরে প্রাথমিক অধিদফতর ও টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।চুক্তি অনুযায়ী সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল করার যাত্রা শুরু হবে। টেলিযোগাযোগ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।