কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে রেজিমেন্টাল কালার প্যারেড শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এটা একটা নৃশংস এবং অত্যন্ত জঘন্যতম ঘটনা। তদন্ত হচ্ছে। আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আশা করি যে, তদন্তটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে- যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা সেনাবাহিনীতে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত কারও সঙ্গে না হয়।’
মামলার তদন্তে সন্তুষ্ট কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে, তদন্তনাধীন বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্তে সন্তুষ্ট কি-না এটা এখন বলা যাবে না। এটুকু বলতে পারি, অত্যন্ত জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে, এটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। তদন্তে কী বেরিয়ে আসে সেটা দেখি এবং সাজাটা যখন হবে, তখনই সন্তুষ্টির বিষয়টা আসবে। তার আগে সন্তুষ্টির বিষয়ে বলার কোনো সুযোগ নেই।’
সেনাপ্রধান বলেন, আমরা দেখে আসছি যে, একটা ঘটনা ঘটলে কেউ না কেউ একটা অন্যায্য বিশেষ সুযোগ নিতে চায়। এবারও অনেকে চেষ্টা করেছিল। হয়তো এখনো করছে। এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে; তবে সচেতন মানুষ এগুলো বোঝে। একটা ঘটনা ঘটেছে, অবশ্যই অত্যন্ত নৃশংস, ন্যক্কারজনক ঘটনা। সেটা শুধু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেই ঘৃণা জানানো হয়নি, পুলিশপ্রধানও এসেছিলেন, তারাও ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সবাই এ ঘটনার জন্য মর্মাহত।
সিনহা হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনীও তদন্ত করছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের অস্বাভাবিক কিছু যদি হয়, সেটা আমাদের অভ্যন্তরে তদন্ত হয়। এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ আমরা দিয়েছিলাম, এটা হচ্ছে।’
এর আগে সকালে সেনা সদস্যদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে বাহিনীর ছয়টি ইউনিটকে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পতাকা তুলে দেন সেনাপ্রধান।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে ‘গাড়ি তল্লাশিকে’ কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পর বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে টেকনাফ থানার ওসি (পরে বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, এপিবিএনের তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
এর মধ্যে এপিবিএনের তিন পুলিশ সদস্য পৃথকভাবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি দিয়েছেন পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতও। চার দফায় ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে ওসি প্রদীপকে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।