পেঁয়াজ রাজনীতি এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী মৈত্রী অনুসন্ধান

বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যে কোন দেশ তাঁর স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দি অতিক্রমকালে একটি কঠিন সময় পাড় করে।

আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেয়াতে ১ কেজি পেঁয়াজের মুল্য ২৫০/ + হয়ে বাজার অস্থির করে দেয়। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শুনেছি তিনি তাঁর বাবুর্চিকে পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করবার নির্দেশ দেন। বিগত ৮/৯ মাসে বাংলাদেশী জনগন ভারতীয় পেঁয়াজ প্রত্যাখান করে তাঁদের ২৫০/ কেজি দরের পেয়াজকে ২/৩ টাকা দরে নিলামে নামিয়ে আনতে বাধ্য করে। বাংলাদেশী জনগণ হাজারো ব্যর্থতার মাঝেও পেঁয়াজ আন্দোলন করে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। আজ তাই যখন দোকানে গিয়ে শুনি ও ভাই আঁখের দেশী চিনি দেন, ১০/ কেজিতে বেশী হলেও কিনবো, তখন টলমলে সাহসের নিক্তিতে আত্মবিশ্বাসের পাল্লাটা ভারী হতে দেখি। এ যেন স্বাধীনতার অর্ধশতকে বাংলাদেশী জনগণের আত্মউপলব্ধি হতে জাতির জন্য সবচেয়ে বড় প্রেরনা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

আমি এবং আমরা পজিটিভ চিন্তায় বিশ্বাস করার অভিপ্রায় নিয়ে আজ বিশ্লেষণ করবো বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে তাঁর উন্নয়ন সহযোগী অনুসন্ধানে সতর্কতা অবলম্বন করে এগুতে হবে। বর্জন করতে হবে আবেগ এবং সস্তা অসত্য ইতিহাস।

একটা কথা আছে না, পাগল নিজের ভালোটা সবার আগে বোঝে। এই বোঝায় নেই কোন অপরাধ। ইসলাম ধর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া যে বান্দা যত বেশী ইবাদতের মাধ্যমে আদায় করে, তাঁর জন্য সমমাত্রার পুরষ্কার রক্ষিত থাকে। তাই আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে আমাদের স্বার্থকে সর্বাঙ্গে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে চলবো। বাংলাদেশের জনগণের পেঁয়াজ রাজনীতিতে এই অবদান আমাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসের পালকে তাই দিয়েছে আরেকটি সাফল্য এবং জাতিগতভাবে আমাদের কর্তব্যের উজ্জ্বল এক উদাহরণ।

এবার বাংলাদেশ, ভারত ও চীন প্রসঙ্গ নিয়ে অর্থনৈতিক, সামজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণে চলে যাই। আজ কেবল সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণে আমরা দৃষ্টিপাত করবো।

কিছুদিন আগেও যে চীনারা আফিমে ডুবে থাকতো আজ তাঁরা বিশ্বের উদীয়মান ১ নম্বর অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। কিভাবে ঘটাল এই ম্যাজিক? বৌদ্ধ ধর্মের অধিকারী চৈনিক জাতীয় নেত্রীবৃন্দের দূরদর্শিতা এবং প্রতিটি চাইনিজ নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষনের আওতায় এনে তাঁরা ভাড়াটে বাহিনী ছাড়াই নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সমস্ত চৈনিক জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করেছে বিধায় জাতীয় ইস্যুতে তাঁদের অভিন্ন ইচ্ছাশক্তির কাছে পৃথিবীর অর্থনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান শক্তিশালী রাষ্ট্রসমুহকে আজ মিউ মিউ করতে দেখা যায়।

ইসলাম ধর্মের মুল চেতনা হল রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষায় দীক্ষিত করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইসলাম ভারাটে বাহিনী দিয়ে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ঘোরতর বিপক্ষে। আমাদের প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা বিজয়সহ সকল যুদ্ধেই তাঁর উদাহরণ দৃশ্যমান।

চীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের পরীক্ষিত এক মিত্র যার স্বভাব অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিপক্ষে যা ভারত এবং আমেরিকার বেলায় সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র। চীনারা কেবল বোঝে তাঁদের ব্যাবসায়িক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ। এই স্বার্থ নিশ্চিতকল্পে তাঁদের যা যা করনীয়, তা করতে তাঁরা ছাড় দেয় না এক চুল পরিমানও।

বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিজয় পরবর্তী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে Blue Economy দিয়ে Geo Political Strategic Importance বিষয়টির সুবিধা আদায়ে গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়ায় হারিয়েছে তাঁর দর কষাকষির মোক্ষম সুযোগ। আর সেই ব্যর্থতাকে সম্পূর্ণ নগদায়ন করেছে মায়ানমার। আজ যেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে চীনের সাথে Win Win Basis এ Negotiate করতে পারতাম, তা লুফে নিয়েছে মায়ানমার। এই সত্য আমাদের স্বীকার করতেই হবে। আজ বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও চীনের Veto ক্ষমতার জ্বালে বিষয়টি বন্দি এক অনিষ্পন্ন/অনিশ্চিত সমস্যাকারে বাস্তবতা। আমরা স্বীকার করি আর না করি, চীনের সমর্থন ব্যাতিরেকে বাংলাদেশ এই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধান হতে উত্তরন হবে না কখনোই।

বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য তাই চীন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিমালাই পারবে আমাদের উত্তরনে চালিকা শক্তিরুপে আমাদের সুপার ফাস্ট ট্র্যাকে উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান হতে।

পক্ষান্তরে ভারতের সাথে আমাদের তিস্তার পানির মুলা ঝুলানো এবং Tom & Jerry এর খেলা ও বাঁদরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠার ক্রমাগত নাটিকার একই বোতলে পুরানো মদ পরিবেষণের দৃশ্য অবলোকন এবং Hopeful বিবৃতির আশ্বাসে আমরা বাধ্য হয়েই চীনের সাথে তিস্তা প্রকল্পের আগ্রহ দেখাতে বাধ্য হয়েছি। তিস্তার মুলায় যে শেকড় গজিয়ে শক্ত কাঠ হয়ে গেলো না?

ভারতের প্রতি আমাদের একচেটিয়া ভালবাসার প্রতিদানে তাঁদের অবহেলা আমাদের জনগণকে ব্যাথিত করেছে। আমরা বাংলাদেশী জনগন কৃতজ্ঞ একটি জাতি, কৃতঘ্ন নই। ভালবাসার পাল্লায় একক আচরণ আমাদের তাই আজ অবকাশের সুযোগ দিয়েছে আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতায় আদর্শ সহযোগী বেছে নেয়ার। আমরা বাংলাদেশী জনগন খয়রাতি সাহায্যের প্রতি চরম বিদ্বেষী। আমাদের জাতীয় অহঙ্কার এবং আত্মসম্মানে আঘাত আমাদের অপমানবোধ জাগ্রত করবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে যেকোন বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের অযাচিত নাক গলানোকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি। এরই নমুনা পেঁয়াজ রাজনীতি দিয়ে বাংলাদেশী জনগন নমুনা প্রদর্শন করলো কি? এটা কি কোন শংকেত?

বাংলাদেশের জনগণকে রাষ্ট্রের স্বার্থে একত্রিত করবার ব্যর্থতা আমাদের সকলের উপর কম বেশী বর্তায় বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের প্রতি যাদের আমরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করি। অর্থনীতি যেথায় রাজনীতির চালিকা শক্তি, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের আরও বেশী বেশী করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজ দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাজনৈতিক দলসমুহ তাঁদের সঠিক কর্মসূচীর অভাবে জনগণকে জাতীয় সমস্যায় সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, হচ্ছে এবং সামনেও হতে পারে যদি আত্মোপলব্ধিতে আমাদের মোটা চামড়ায় ইজ্জতে আঘাতপ্রাপ্ত না হই। এ অবস্থার উত্তরন ঘটাতে আমাদের Reboot & Refresh করে সিস্টেমকে এগিয়ে নিয়ে চলতে হবে। আমরা নাগরিক হিসাবে প্রত্যেকেরই সামান্য ক্ষুদ্র অবদান যেমন দেশীয় আঁখের তৈরি পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ চিনিশিল্প বাঁচাতে আমাদের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ এবং অধুনা পেঁয়াজ রাজনীতির সাফল্য আমাকে আশাবাদী করছে।

আবারো পেঁয়াজ নিয়ে আসলাম। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ যখন পেঁয়াজ নিয়ে সচেতন হলো, তখনি এটা পরিষ্কার যে জনগনের ইচ্ছা আকাংখা বাস্তবায়নে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং পলিসি মেকারদের ফরজ হয়ে পড়ে কৃষককে বাগড়া না দিয়ে উতসাহ দেয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিৎ যখন রোপনকৃত পেঁয়াজ বাজারে আসি আসি ভাব করছে, তখনই আমদানীকৃত পেঁয়াজের উপর কর বাড়িয়ে দেয়া। সামান্য এইটুকুন প্রণোদনা পেলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। এভাবে আমরা আমাদের ইচ্ছাশক্তির সমষ্ঠিগত মিলনগুলোকে এক সুতায় গাঁথতে পারলে বিজয় আমাদের নিশ্চিত এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমাদের বুর্জুয়া সমাজ ব্যাবস্থায় দেশের স্বার্থ সংরক্ষনে যে বা যাহারা অবদান রাখতে ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছে, করছে বা করবে, তাঁদের প্রতি থাকবে না আমাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি।

আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে আলোকিত স্বপ্ন দেখতে চাই। চাই না কোন কালো অধ্যায় বা অসাংবিধানিক কোন পদক্ষেপ। তবে হ্যাঁ, সে সংবিধান হতে জনমুখী। চাপিয়ে দেয়া বা সামন্তবাদিদের স্বার্থ রক্ষার কোন দালিলিক সংবিধান চাই না। আমাদের স্মরনে রাখতে হবে সেই বিখ্যাত উক্তি " There're No Permanent Friends or Permanent Enemies, Just Permanent Interest in Politics.

আবার এই আলোচনা অন্য কোন এক ছুটির বিকালে ব্যাপক আকারে চায়ের গরম মগ নিয়ে করবো। সেই অব্দি, সাময়িক বিদায়। ধন্যবাদ ।

লেখকঃ- মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অবঃ )

আহবায়ক – দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক

ahmedferdous987@gmail.com

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top