প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। শীতের কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে আজকের ভোরের আলোতে যেন বেশি মায়া মাখানো। যেন নতুন স্বপ্নের কথা বলছে। বলছে সামনের দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীতে।
আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের প্রাণে, মনে। আজ ২০২১ সালের প্রথম দিন। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতো আমরাও আমাদের অগণিত পাঠককে জানাই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। নতুন বছরটি আনন্দে, শান্তিতে ভরে উঠুক—এই প্রত্যাশা।
দেশবাসীকে নতুন বছর উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ।
নতুন বছরটি যেন সমাজ জীবন থেকে, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সব গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। রাজনৈতিক হানাহানি থেমে গিয়ে যেন আমাদের প্রিয় দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। ২০২০ ছিল বিষাদের বছর, বিচ্ছিন্নতার বছর। কোভিড-১৯-এর আগের বিশ্ব আর পরের বিশ্বের মধ্যে মিল কোনোদিনই হবে না।
প্রতিটি মানুষ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো জেগে থেকে বাঁচার আকুতি নিয়ে কাটিয়েছে পুরো বছর। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ঘিরে ফেলেছে এই মহামারি কাল। করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, মৃত্যু, লাখো মানুষের রোগভোগ ও অনিশ্চয়তা, লকডাউনের কড়া বিধিনিষেধ আর সেই মহামারির ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে আবার জীবনের জেগে ওঠার লড়াইয়ের বছর ছিল ২০২০।
সেই বদ্ধ জীবন থেকে পুনরায় স্বাভাবিক পৃথিবীর ফিরে আসার প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হলো ২০২১। করোনার টিকা পাওয়ার আশার আলো জ্বালিয়ে শুরু হয়েছে নতুন খ্রিষ্টীয় বছর। বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উত্সবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়।
বাংলাদেশেও নিরাপত্তাজনিত নিষেধাজ্ঞা ও করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার কড়াকড়ির মধ্যেও ২০২১ সালকে স্বাগত জানিয়েছে তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের আগামী বছরের মঙ্গল কামনা করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো শুরু হয়ে গেছে ফেসবুক, টুইটার ও মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে। নববর্ষকে ঘিরে বিক্রির জন্য রং-বেরঙের নতুন ক্যালেন্ডার ও ডায়েরিতে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন বিপণিবিতানের প্রাঙ্গণ।
প্রিয়জনকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে কার্ডের শো-রুমগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো নতুন বছরকে বরণ করতে বাংলাদেশেও এবার নানা আঙ্গিকের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিধিনিষেধ মাথায় রেখেই এবার ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনে মেতেছিল দেশবাসী। দেশের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে নববর্ষ উপলক্ষ্যে ছিল নানা আয়োজন।