খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে বিদেশ যাবেন বেশকিছু কর্মকর্তা। দেশে এসে তারা সেটি বাস্তবায়ন করবেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ফিডিং কার্যক্রম আরও উন্নত করতে কিছু কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানো হবে। তবে কতজনকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সে তথ্য জানা নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার হিসেবে স্বাস্থ্যসম্মত খিচুড়ি খাওয়ানো হবে। বর্তমানে দেশের ১৬টি উপজেলা পাইলটিং হিসেবে প্রায় এক হাজার বিদ্যালয়ে তিনদিন দুপুরে রান্না করা খিচুড়ি শিক্ষার্থীদের খাওয়ানো হচ্ছে। এটি সারাদেশে চালু করতে ১৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।”
প্রস্তাবনায় বিদেশ সফরে ৫০০ কর্মকর্তাকে খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প পরিকল্পনায় কতজন কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে যেসব দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল কার্যক্রম চালু রয়েছে সেখানে কিছু কর্মকর্তাকে দেখে আসার জন্য পাঠানো হবে। আমরা শুধু প্রস্তাব পাঠিয়েছি, সেটি বিচার-বিবেচনা করে অনুমোদনের দায়িত্ব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও একনেক সভার সদস্যদের হাতে। তারা যেটি পাস করবেন, সেটি বাস্তবায়ন হবে।’
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) প্রাথমিকভাবে ৫০ কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রার জন্য পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে। এছাড়া দেশেই প্রশিক্ষণের জন্য আরও ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এর আওতায় পাঁচ বছর ধরে প্রায় এক কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে পুষ্টিকর বিস্কুট ও রান্না করা খিচুড়ি দেয়া হবে। ৫০৯টি উপজেলার শিক্ষার্থীরা এ খাবার পাবে।
তবে পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্পের নানাবিধ ব্যয় কমাতে বলেছে। বিদেশ সফরের জন্য দুটি দলে অল্প সংখ্যক কর্মকর্তাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশেও এ ধরনের প্রশিক্ষণের বিষয়ে যৌক্তিকতা কী জানতে চেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ধরনের খাবার বিতরণ নতুন নয়। ডিপিই দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন জানিয়েছেন, খিচুড়ি রান্নার প্রশিক্ষণের জন্য নয়, অন্যান্য দেশ স্কুলে মিড ডে মিল (দুপুরের খাবার) কীভাবে বাস্তবায়ন করে, সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মোট প্রকল্পের অতি অল্প অর্থ ব্যয় ধরা হয়েছে। এ অর্থ ব্যয় কোনো অপচয় নয় বরং অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাটা রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের ৫০০ কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়াসহ বেশকিছু অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করেছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে সামাজিক সংহতির জন্য সাড়ে সাত কোটি এবং পরামর্শকের জন্য ছয় কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আট লাখ টাকা দিয়ে একটি এসি ও দুই কোটি টাকা দিয়ে ফার্নিচার ক্রয়ের বিষয়েও আপত্তি তুলেছে। মিটিং, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই।
ওই প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা খাবার ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া খাবার সরবরাহের জন্য ১৭ কোটি এবং প্লেট কেনার জন্য ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যয় মূল্যায়ন ছাড়াই কমানো সম্ভব বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।