এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দেহ থাকলেও নেই প্রাণ!

কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ কান্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলার ঠাকুরপাড়ায় অবস্থিত এ বিদ্যালয়টির দরজার তালা খোলা হয় না গত এক দশক ধরে।

এই ১০ বছরে চারিদিকে উঁচু উঁচু ভবন গড়ে ওঠায় বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরটি ঢাকা পড়েছে ভবনগুলোর আড়ালে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ডটিতে মরিচা পড়ে অনেকটাই মুছে গেছে নাম-প্রতিষ্ঠান এবং সাল। পরিত্যক্ত কক্ষগুলোর ভেতরে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। পূর্ব দিকে একটি রাস্তা ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি হয় চলে গেছে নজরুল অ্যাভিনিউর করভবনের সামনে। পশ্চিম দিকে বড় বড় ভবন উঠেছে। পূর্ব দিকে দোকানপাট, উত্তরে ভবন ও মন্দির।

স্থানীয়রা জানান, বন্ধ হওয়া বিদ্যালয়টি চালু করতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে। প্রথমত শিক্ষার্থীদের জন্য মাঠের ব্যবস্থা করার মতো জায়গা এখানে নেই। দ্বিতীয়ত জায়গা সংকটের করণে নতুন ভবন করার সুযোগ ও শিক্ষার্থীদের চলাচল উপযোগিতা নেই।

সূত্রমতে, ৭০ দশকে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টি গত ১০ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কার অবহেলায় কেন বন্ধ হয়ে গেছে তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। ওই স্কুলের শিক্ষকরা এখন কোথায় আছেন, তাও জানেন না স্থানীয়রা।

এদিকে যেকোনো সময় বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরটি ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ওই স্কুলটির কাছে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিকের বাসা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ এলাকায় ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছি। একসময় আমার ঘুম ভাঙতো শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দে। আমি মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে ঘুরে যেতাম। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতাম। কিন্তু হুট করে গত ১০ বছর আগে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। নতুন প্রজন্মের লোকজন এবং এখানকার ভাড়াটিয়ারা জানেনই না যে এখানে একটি বিদ্যালয় ছিল!

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার ছেলে-মেয়েসহ নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে। আগামী শিক্ষা বছরের আগে সেটি চালুর উপযোগী করার আবেদন জানাচ্ছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল মান্নান  বলেন, স্কুলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সেটি আমাদের নলেজে রয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে সেটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া এখানে নতুন ভবন করার আবেদন জানানো হয়েছে।

এখানকার শিক্ষকরা কোথায় পদায়ন পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। ওনারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তাদের অন্য কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন হওয়ার কথা।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published.

scroll to top